1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে ‘আনস্মার্ট’ বাজেট?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ জুন ২০২৩

সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন এই বাজেট দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বাস্তবায়নযোগ্যও নয়৷

অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট পেশ করেন৷ (ফাইল ছবি)
অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট পেশ করেন৷ (ফাইল ছবি)ছবি: Xinhua News Agency/picture alliance

করযোগ্য আয় না থাকলেও সরকারের ৩৮ ধরনের সেবা পেতে বছরে দুই হাজার টাকা আয়কর আদায়ের প্রস্তাব নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে৷ সিপিডি বলেছে এটা যৌক্তিক নয়, নৈতিকও নয়৷

বিশ্লেষকরা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য যে বাজেট দেয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি ‘আনস্মার্ট’৷ এই ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নও কঠিন৷ মানুষেকে সবচেয়ে চাপে রেখেছে যে মূল্যস্ফীতি, সেটা নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো পরিকল্পনা বাজেটে নেই৷ করের বোঝা চাপানো হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর, যারা ধনী বা উচ্চবিত্ত, তাদের বলতে গেলে রেহাই দেয়া হয়েছে৷ বিশাল ঘাটতির এই বাজেটের অর্থের জন্য নির্ভর করতে হবে বিদেশি ঋণ ও দেশের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের ওপর, যা নানা নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে৷

তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘টাকার কোনো সমস্যা হবে না৷ নতুন অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হলে টাকা রাখার জায়গা পাওয়া যাবে না৷ আয় আসবেই৷ আয় বৃদ্ধির নানা পথ তৈরি হয়েছে৷ প্রত্যেকটা সেতু থেকে টোল আদায় হবে৷’’

প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আকার ধরা হয়েছে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা৷ বাজেটে ঘটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা৷ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব আদায় করবে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা৷ ঘাটতি পূরণের জন্য বৈদেশিক ঋণ নেয়া হবে এক লাখ দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা৷ দেশের ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা৷ এবার এডিপির আকার দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা৷

জিডিপির প্রবৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে ৭.৫ ভাগ৷ মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে, যদিও এখন সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ৯.৩৩ শতাংশ৷

সিপিডি তাদের আনুষ্ঠানিক বাজেট বিশ্লেষণে বলেছে, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা হচ্ছে উচ্চমূল্যস্ফীতির চাপ৷ এ চাপ মোকাবিলায় বাজেটে কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপই নেই৷ উল্টো অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে৷’’

এ ছাড়া বাজেটে এমন কিছু রাজস্বব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে কিছু পণ্যমূল্য বাড়বে, যার প্রভাব সরাসরি মানুষের, তথা ভোক্তার ওপর পড়বে৷ সিপিডি বলছে, বাজেটে যেসব প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই বাস্তবভিত্তিক নয়৷ তাই এসব লক্ষ্য অর্জন শেষ পর্যন্ত হবে না বলে মনে করে সিপিডি৷

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যে কৌশল দরকার তা বাজেটে নেই: তৌফিকুল ইসলাম খান

This browser does not support the audio element.

সিপিডির রিচার্স ফেলো অর্থনীতিবিদ তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী যে বাজেট দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে হলে আয়ের ৪০ ভাগ গ্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে৷ বাস্তবে সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়৷ আয় বাড়ানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর ইচ্ছা বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে৷ কিন্তু সেই আয় কীভাবে বাড়াবেন, তা কিন্তু স্পষ্ট নয়৷ আয়- ব্যয়ের যে হিসাব তিনি দিয়েছেন, তা গতানুগতিক৷ নতুন কিছু নেই৷’’

তার কথা, ‘‘দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যে কৌশল ও অ্যাডজাস্টমেন্ট দরকার তা বাজেটে নেই৷ তিনি যে অর্থনৈতিক প্রক্ষেপণ করেছেন তা বাস্তবভিত্তিক নয়৷’’

বিশ্লেষকরা বলছেন, করমুক্ত বার্ষিক আয়ের সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দেবে৷ কিন্তু নিবন্ধিত করদাতাদের সরকারি ৩৮টি সেবা পেতে করযোগ্য আয় না থাকলেও কমপক্ষে দুই হাজার টাকা দিতে হবে- এটা নীতিবিরোধী৷

পেনশনভোগী এবং গৃহিনীসহ জনসংখ্যার একটি বড় অংশের আয় বছরে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকার কম হলেও ন্যূনতম কর দিতে হবে৷ কিন্তু যারা ধনী তাদের রেহাই দেয়া হয়েছে৷ ধনীদের চার কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদের ওপর কোনো সারচার্জ দিতে হবে না৷

মূল্যস্ফীতি, ডলার ও রিজার্ভ সংকট যে দেশে বিদ্যমান বাজেট দেখে তা মনে হয় না: ড. সেলিম রায়হান

This browser does not support the audio element.

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘‘এখনকার অর্থনীতির বাস্তবতা মাথায় রেখে বাজেট করা হয়নি৷ উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার ও রিজার্ভ সংকট, জ্বালানি সংকট এগুলো যে দেশে বিদ্যমান বাজেট দেখে তা মনে হয় না৷ মূল্যষ্ফীতি যে ছয় ভাগে নামিয়ে আনা হবে, সেটা কীভাবে? তার কোনো কথা বাজেটে নেই৷ ৭.৫ ভাগ প্রবৃদ্ধি, ব্যক্তি খাতে বিশাল বিনিয়োগের স্বপ্ন- এগুলো একবারেই অবাস্তব৷’’

তার কথা, ‘‘বিশাল এই ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নও সম্ভব হবে বলে মনে হয় না৷ সরকার যদি বাজেট ঘাটতি মিটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে বড় ধরনের ঋণ নেয়, তাহলে ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাবে৷ বাজেটে যে ব্যক্তি খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে সেটা তাহলে কোনোভাবেই সম্ভব হবে না৷ আর যদি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা নেয়, তারা তো কাগুজে টাকা ছাপিয়ে দেবে৷ এতে তো মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘অর্থনীতির সূচক ও চালকগুলো না বুঝে বাজেট করলে সেই বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায় না৷ ফলে প্রতিবছরই বড় একটি অংশ বাস্তবায়িত হয় না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ