1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মধ্যবিত্তের ঘরে বাজেট ঘাটতির চাপ

তম হোসেন
৯ জুন ২০২৩

টান পড়েছে ডলারে, লোডশেডিংয়ে ফিরেছে বাংলাদেশ৷ ঘরে ফিরেছে হাতপাখা৷ অর্থনীতি যে পথে আছে, সেখানে মোটা ভাত, মোটা কাপড়ের যে আবহমান বাংলা- সেদিকে ফেরার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না৷

বাংলাদেশি টাকা৷
ছবি: MD Mehedi Hasan/ZUMA Press/picture alliance

ধনবানরা সামলে নিতে পারছেন৷ দরিদ্ররা হয় সরকারের সহায়তা পাচ্ছেন, নয়তো চেয়েচিন্তে একরকম করে কাটাচ্ছেন জীবন৷ কিন্তু মধ্যবিত্ত যারা- তাদের পথ কী? আগামীর স্বপ্ন দেখে চলা এই শ্রেণি কেমন আছেন? কেমন যাবে তাদের সামনের দিনগুলো?

অর্থের হিসেবে একটি বছর বিদায় নিতে চলেছে, নতুন একটি বছর আসছে৷ এমন সময়ে মূল্যস্ফীতির যে গতি তাতে বিলাস পণ্য শুধু নয়, দরকারি কিছু জিনিসপাতিও আপাতত বাজারের তালিকা থেকে বাদ রাখছে মাঝারি আয়ের মানুষ৷ যে ঘরে আগে সপ্তায় তিন দিন মাংস খাওয়া হতো, এখন হয়তো তা দুই দিনে নেমে এসেছে৷ যে গৃহকর্তা আগে মাসে একবার গরুর মাংসের দোকানে যেতেন, এখন যাচ্ছেন হয়তো মাস তিনেক পর পর৷ যে ব্রয়লার মুরগি সাধারণের হাতের নাগালে ছিলো৷ তার দাম চুকাতে গেলেও এখন পকেট থেকে বাড়তি টাকা খসে পড়ছে৷ তাই এক বেলার জায়গায় দুই বেলা হয়তোবা ডাল-ভাত-ভর্তার মতো প্রণালির শরণ নিতে হচ্ছে৷ কারণ রাষ্ট্র তার ঘাটতি মেটাতে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের কাছে যেতে পারে৷ কিন্তু আমজনতা ধারদেনা করে খুব বেশি দিন চলতে পারে না৷ ঋণখেলাপি হওয়ার ভয় তাদের তাড়া করে বেড়ায় সবসময়৷ এমন ত্রস্ত যাপিত জীবন কেবা চায়!

নিজের কোষাগার ঠিক রাখতে নাগরিকের পেছনে লেগে থাকে রাষ্ট্রও৷ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কিংবা ঋণদাতা হিসেবে যেসব বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান কাজ করে, তারাও কেন জানি সরকারকে অবিরাম ইন্ধন দিতে থাকে- ‘ভ্যাট বাড়াও, আয়কর বাড়াও, ভর্তুকি কমাও৷' তারই প্রতিফলন এবার বাংলাদেশের আসছে অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে৷ আপনার যদি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) থাকে, আপনার বছরে কোনো আয় না থাকলেও রিটার্ন দাখিল করতে গেলে অবশ্যই দুই হাজার টাকা জমা দিতে হবে৷ আয় নেই এমন নাগরিকের কাছ থেকে আয়কর আদায়ের পথেই যেন হাঁটছে আমাদের অর্থ-প্রশাসন৷

অন্যদিকে গ্যাস, তেল, বিদ্যুতের মতো নিত্যদিনের জ্বালানির দাম বাড়ানোর সহজ পথ আগেই করে নিয়েছেন সরকার বাহাদুর৷ জনতার কথা শুনতে রাজি নন তারা৷ তাই উঠিয়ে দেয়া হয়েছে গণশুনানির বাধ্যবাধকতা৷ জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের আদেশই এখন গ্রাহকের জন্য আইন৷ আর এই খাতে কোনো বৃদ্ধি মানেই আরেক দফা বাজার চড়া হওয়া৷ আরেক দফা বাসা ভাড়া বৃদ্ধি৷ বরাদ্দ বাড়াতে হয় তখন বাসা ভাড়ার খরচায়ও৷ এসব নিয়ে বেশি বিপাকে আছে চাকরিজীবী শ্রেণি৷ কারণ ব্যয় বেড়ে চললেও তাদের বেতন সেই গতিতে বাড়ছে না৷ বেসরকারি চাকুরেরা এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে না পারলেও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অর্থমন্ত্রীর বাজেট পেশের আগে থেকেই মাঠে আছেন৷ বাজার মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন-ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করছেন তারা৷ নতুন জাতীয় বাজেটে এ বিষয়ে ইতিবাচক ঘোষণা আশা করেছিলেন সরকারি কর্মচারীরা৷ কিন্তু তেমন কোনো প্রাপ্তি দেখতে পাননি৷ তাই আবার মাঠে নেমে দাবি আদায়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাষ্ট্রে নিয়োজিত চাকরিজীবীরা৷ বছর শেষে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন তাদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি শেষ অবধি অবশ্য ইতিবাচক সিদ্ধান্তের দিকেই এগুবে বলে মনে হচ্ছে৷

তবে বছরের এই ধাপে এসে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বেড়ে গেলে কিন্তু বেসরকারিদের বিপদ আরেক দফা বাড়বে৷ কারণ গণহারে সরকারি স্তরে বেতন বৃদ্ধির মতো বিষয় বাজারে ছাপ রেখে যায়৷ ২০১৫ সালে সবশেষ পে স্কেলের বেলায় কিন্তু নিত্যদিনের সব জিনিসের দাম আমরা বাড়তে দেখেছি৷

প্রকৃতিতে গরমের তোপ, দফায় দফায় লোডশেডিং, বাজারে আগুন- সবটা মিলে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশের মতোই মধ্যবিত্তের জীবন এখন জেরবার৷ জাতীয় নয়, ঘরের বাজেটের হিসেব কিছুতেই মেলাতে পারছে না তারা৷ ঘাটতি নিয়েই তাদের এখন জোড়াতালির ঘর-বসতি-সংসার৷ অর্থমন্ত্রী ঘোষিত, ‘গরিব-ধনী'র বাজেটে মধ্যবিত্তের কথা কী আসলে ভাবা হয়েছে সেভাবে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ